চারদিকে কেবল ব্লগ আর ব্লগিং রব। অনেকেই অনেক রকমারি প্রসঙ্গ নিয়ে ব্লগ খুলেছেন। সবারই মন ভরা আশা যে ব্লগ সফল হবে, বিপুল জনপ্রিয়তা আসবে, প্রতিদিন হাজারে হাজারে ভিজিটার ভরে যাবে ব্লগে, মন খুশী করে দেওয়া পেজরেংক ও এ্যালক্সা রেংক হবে। ব্লগারের নাম হয়ে উঠবে একটি ব্র্যাণ্ডনেম, নামেই পরিচয় ছড়িয়ে পড়বে... কিন্তু না, মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় যেমন সবাই উঠতে পারেননা, তেমনি সকল ব্লগার খ্যাতির শিখরে পৌছে যেতে পারেননা। যারা পারেননা, তারা কি কি করলে পারবেন, সেইসব নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। সেইসব টিউটোরিয়ালের সাইক্লোনেও অনেক ব্লগার অস্থির, সবকিছু করেও সাফল্য আসেনা কারো কারো। অবশেষে পাশ্চাত্যের প্রোফেশনাল ব্লগারদের কথা ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হয়।
কিন্তু যারা সাফল্য পেয়েছেন, যতোখানিই হোক, তাদের ভবিষ্যত প্ল্যান কী? সাফল্যের গন্তব্য পর্যন্ত পৌছোনোর আগে একটা লড়াই চলে। গন্তব্যে পৌছে গেলে তখন কী হয়? তার পরে কী? এইসব নিয়ে খুব কমই আলোচনা হয়। কিন্তু এই টপিক খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাফল্য কি বাচ্চার হাতের মোয়া? অনেক পরিশ্রম করেই পেতে হয়, এই কষ্টের ধন পেয়ে গিয়ে তখন কী করনীয় সেই আলোচনাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
পৃথিবীর যে কয়টি জিনিসের পেছনে মানুষ দৌড়োয়, সবগুলিই মায়ার খেলা। তবুও জীবনের দৌড়ে মানুষ ছুটে চলে সেইসব ক্ষণস্থায়ী মায়ার পেছনে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে এই ছুটে চলার যখন শেষ হয় তখন চারপাশে বিরাজ করে এক অসীম শূণ্যতা আর স্তব্ধতা।
সাফল্যের পথে গন্তব্যের মোড় থেকে পথ দুইদিকে চলে গেছে। একটি পথ আরো ছুটে চলার। আরেকটি, নতুন দিশায় নতুন কিছুর গন্তব্যের দিকে এগোয়। আপনারা কে কোন পথে এগোতে চান? সিদ্ধান্ত নিতে সাবধান! সাফল্যের চূড়ার পৌছে অনেকেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননা, সারা মন ছেয়ে থাকে মোহে। সেইসাথে গর্ব আর অহঙ্কারের খেলা দিবানিশি একজন মানুষকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে থাকে।
সফল ব্লগার হয়ে আপনি কী করবেন? সমুদ্রের মাঝে অনেকগুলি জাহাজ চেয়ে থাকে লাইটহাউসের আলোর দিকে। আপনি কি উদার নীতি নিয়ে আগামীর ব্লগারদের জন্য দিকনির্দেশনা রেখে যেতে চান নিঃস্বার্থভাবে? নাকি সংকীর্ণ রাস্তায় এগিয়ে সাফল্যের সুমধুর ফলের স্বাদ ভাগ করে খেতে চান কেবল আপনজনদের সঙ্গে? অথবা, গর্ব ও অহঙ্কারের কাছেই নিজেকে ধরা দিয়ে ব্লগার থেকে হিটলারে পরিনত হতে চান? সিদ্ধান্ত অবশ্যই আপনাদের হাতে।
অনেক হেঁয়ালী করছি, তাইনা? কী করবো বলুন, জীবনের পথ মসৃণ হয় যখন জীবনের সব জটপ্যাঁচ ভালো করে জানা থাকে। মায়াবী দুনিয়ার সব খেলার মাঝে নিজেকে মানুষের মতো মানুষ করে তুলে ধরতে গেলে সব জটপ্যাঁচ জেনে নিয়ে চলতে হবে, ভালোর পথ এগোতে গেলেও কিন্তু মন্দের পথটা জানা চাই, নইলে পার্থক্য করবেন কিভাবে কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ? হাত না পুড়লে কি বোঝা যার হাত পোড়ার জ্বালা?
আপনাদের এক একজনের এক এক রকম বয়স। কেউ সমবয়সী নন। যারা ছোট, তারা বড় হচ্ছেন, যারা বড় হয়েছেন তারা আরোও বড় হবেন। সরল দিনগুলো শেষ হয়ে গিয়ে জটিলতার দিন শুরু হয়েই যায়। এই ব্লগ, ব্লগিং এইসব আমাদের সাময়িক উত্তেজনা থেকেই শুরু হয়। কেউ কেউ কিছুদিন পরেই ছেড়ে দেন, কেউ কেউ এগিয়েই চলেন। এগিয়ে চলাদের মধ্যে কেউ কেউ সাফল্যের লক্ষ্যে পৌছেও যান। কিন্তু ওই যে, তার পরে কী, সেটাই জানা নেই ভালোভাবে। তাই আজকে আমি এই প্রশ্ন তুললাম সকলের সামনেই।
আজকে যে প্রশ্ন আমি তুলে ধরলাম ব্লগ ও ব্লগিংয়ের প্রসঙ্গে, আগামী দিনে সবাই এইসব প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন জীবনের অন্য সব প্রসঙ্গেই। সরল করে বলতে গেলে, এ যেন একটি একটি করে পরীক্ষা পাশের পরে পরবর্তী ক্লাশে ভর্তি এবং তার পরে আবারও পরীক্ষার মতো। কিন্তু, জীবনে এমনও অনেক পরীক্ষা আছে যার পরীক্ষক স্বয়ং ঈশ্বর, মার্কস দেন তিনিই - আমাদের কর্মফলের মধ্যে দিয়ে। সামান্যতম ভুলে অনেক নির্মম ও নিষ্ঠুর হয়ে যায় সেই মার্কশিট।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন