শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১০

কিকরে ব্লগিং করতে হয়? আর ব্লগ কী?

"ব্লগ" নামের ব্যাপারটাই এখন মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে মানুষের মনে। ব্লগ যে আসলে কী, সেই সংজ্ঞাই অনেকে ভালো করে বলতে পারবেন না। তার কারন, এখন সবকিছু নিয়েই ব্লগিং হচ্ছে। তাই ব্লগিং এখন নির্দিষ্ট কিছু নয়, ব্লগ এখন সবকিছুকেই বোঝায়। ওয়ার্ডপ্রস, ব্লগস্পট, মুভেবল টাইপ এইসবে কিছু না কিছু লিখে ফেললেই সেটা নাকি "ব্লগ"। আমিও আসল সংজ্ঞার দিকে যাচ্ছিনা। তবে, সামান্য ধারনা দিই কিভাবে ব্লগ এলো। কেনই বা এলো। কি হবে ব্লগ দিয়ে।

অনেককাল আগে ডায়েরী লেখার অভ্যাস ছিলো অনেকের। আজকাল ডায়েরী লেখালেখি প্রায় নেই বললেই চলে। ডায়েরী ব্যাপারটাই কেমন যেন নিষিদ্ধ কিছুকেই বোঝানো হতো। যিনি লিখছেন, তার একান্ত ব্যাক্তিগত জিনিস। তার লিখতে ভালো লাগছে কিম্বা ইচ্ছা করছে, তাই তিনি ডায়েরী লিখছেন। কিন্তু সেটা নাকি কাউকে দেখানো যাবেনা, কেউ পড়লেই নাকি গর্হিত অপরাধের সামিল। অর্থাৎ ব্যাপারটা "কেন করছি জানিনা, ভালো লাগে তাই করছি" ধরনের কিছু হয়ে থেকে গিয়েছিলো। এর বাইরে বেরোতে পারেনি ডায়েরী। তবে এর ফলে একটা ভালো জিনিস ঘটেছিলো, তা হচ্ছে লেখালেখির অভ্যাস জারি থাকা।

সাধারন মানুষের লেখা বলতে ছাত্রজীবনের পড়া করে সেইগুলো লেখা। লেখা বলতে রচনা লেখা। ব্যাস, আর কী? এর পরে চাকুরী জীবনে অফিসের হিসাব খাতা লেখা। লেখা বলতে আর কিছু কি হতো? কিন্তু এছাড়াও মানুষের অনেক বক্তব্য ছিলো যা পাড়ার রকে আড্ডার মাধ্যমেই অনর্গল বকে যেতো সবাই। আর বাড়ির মেয়েরা মেয়েলী আলোচনায় তাদের মতো করে আড্ডা দিতো। লেখালেখির বালাই ছিলোনা। যে যা আড্ডা দিচ্ছে, সেটাই লিখতে বললে অনেকেই থমকে যেতো। সেটা লেখা আর হয়ে উঠতো না কারো। কারন, "লেখা" ব্যাপারটাই যে স্কুলে গরুর রচনা লেখা পর্যন্ত গিয়ে থেমে গেছে! এর বাইরে আবার লেখা কী? এটাই ভাবে অনেকে।

এমনই সময়ে এলো ব্লগ। যারা ডায়েরী লিখতো, তারা অনেক খুশী। ব্লগ লিখতে পারার আনন্দেই তারা ভুলে গেল যে ডায়েরী অন্য কেউ পড়তে না পারলেও ব্লগ যেন সবাই পড়ে এটা ভাবনাই তাদেরকে উত্তেজিত করে তুলেছে। হ্যাঁ, ব্লগ মূলত নিজের কথা লেখার জন্যই এসেছিলো। যিনি যে বিষয়ে যাই বলতে চান, সেইটা লিখে ফেলার ব্যাপার। একই ব্যাপারে যাদের আগ্রহ আছে তাদের পড়ার ব্যাপার এবং মন্তব্য মাধ্যমে আলোচনায় অংশ নেওয়ার ব্যাপার হচ্ছে ব্লগ। এইভাবেই কিন্তু ব্লগ এসেছিলো। পরে অবশ্য বিবর্তনের ঘষামাজায় ব্লগের নানারূপ চেহারা বেড়িয়েছে।

এই যে রিভিউ ব্লগগুলি, এইগুলি আসলে কি, ভেবেছেন কখনো? যারা রিভিউ লিখছেন, তারা তো আসলে নিজেদের মতামতই লিখছেন, তাইনা? কেউ কেউ গল্প আর কবিতা লিখছেন। কেউ নতুন রিলিজ সিনেমা কিম্বা গানের এলবামের রিভিউ লিখছেন। কেউ কেউ "ব্লগ" লেখালেখির উপরে ব্লগ লিখছেন। সব লেখাই ইউনিক হচ্ছে যতোক্ষণ তা নিজের লেখা হচ্ছে। এই দুনিয়ায় কিছু কপি ব্লগার আছেন। যাদের মনে ব্লগিংয়ের শখ অনেক, কিন্তু নিজেরা লিখতে পারেননা। তাদের লেখা অবশ্যই ইউনিক হবেনা। কিছু শতাংশ পরিবর্তন করে ফেলতে পারলেও ইউনিক হবে, কিন্তু সেটা করতেও তো লিখতে জানা চাই! কপি ব্লগাররাও তাও পারেননা।

সবাই ব্লগার নন। ব্লগিং সকলের জন্য নয়। এটা কষ্ট করে মেনে নেওয়াই ভালো।


আরেক ধরনের ব্লগার আছেন, এদেরকে আপনারাও চেনেন, তবে স্বীকৃতি পাননি এরা সেইভাবে। এরা হচ্ছেন মন্তব্য ব্লগার। মানে, এরা ব্লগ লেখেননা, কিন্তু অন্যদের লেখার ব্যাপারে আলোচনা বা সমালোচনা করেন সারাজীবন। এরাও ব্লগার। নিজেদের মত প্রকাশ করেন। তবে একসঙ্গে বেশি লিখতে পারেননা বলেই নিজেরা ব্লগ লেখেননা এরা।

তাহলে মূল বিষয়টা কেমন দাঁড়াচ্ছে? নিজের লেখা, নিজের মতামত, নিজস্ব কিছু কথা - এইই তো? কিন্তু এইভাবে ভাবেন না অনেকেই। তাই অনেকের মনেই অনেক প্রশ্ন। ইউনিক লেখা মানে কী, কিকরে লেখা যাবে ইত্যাদি। আজকে আপনার বাসায় মেহমান এসেছেন, ছিলেন কিছুক্ষণ, অনেক গল্প হয়েছে, প্রচুর খানাপিনা হয়েছে। লিখে ফেলুন না? ইউনিক হবেই হবে লেখাটি। হতে পারবেন সোসিয়াল ব্লগার। পথে কাজে যাচ্ছিলেন, দুর্ঘটনা দেখলেন? লিখে ফেলুন? সিটিজেন জার্নালিস্ট ব্লগার হয়ে যাবেন। নতুন রিলিজ সিনেমা দেখে এলেন, কিম্বা গানের নতুন এলবাম কিনে এনেছেন? লিখে ফেলুন? এন্টারটেইনমেন্ট কিম্বা মিডিয়া ক্রিটিক ব্লগার হতে পারবেন। ইউনিক লেখা নিয়ে আবার ভাবতে হয় নাকি? অন্যের লেখা কপি আর পেস্ট? নাঃ, একেবারেই প্রয়োজন পড়বেনা!

আপনার মনে অনেক কথা, অনেক প্রতিক্রিয়া - সেইসব লিখে ফেলাই ব্লগিং। বিষয় ভিন্ন হতে পারে, মূল ব্যাপার একই। আপনি যা জানেন, বোঝেন, ভাবেন, করেন - যাই লিখবেন, নিজের কথা দিয়েই লিখবেন, তবেই আপনি ব্লগার। টাকা আয় হলো কি হলোনা তা দিয়ে কিন্তু সফল ব্লগার নির্ধারন হয়না। প্রতি পোস্টে ৩০'টা করে মন্তব্য আসার মানেই সফল ব্লগার নয়। লিখবেন, লিখতে পারাই ব্লগিং। এই মূল সত্য বুঝে যদি চালিয়ে যেতে পারেন, পাঠকরাই আপনাকে খুঁজে নেবে।

২টি মন্তব্য: