রবিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১০

ব্লগ থেকে কি আয় সম্ভব?

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় একজন ইউজার ব্লগ একাউন্ট খোলেন আয়ের উদ্দেশ্যে, অথচ কিছুদিন পরে তিনি আবিষ্কার করেন যে তিনি আয় করতে পারেননি, হয় আশানুরূপভাবে পারেননি নয়তো একেবারেই পারেননি। তখন শুরু হয় অন্ধকারে হাতরে বেড়ানোর পালা। প্রোফেশনাল ব্লগারদের সুখ্যাতি শুনে তাদের ব্লগে যাওয়া, অন্যান্য ইউজারদের সাফল্যের কাহিনী পড়ে তাদের সফল ব্লগটিকে নীরিক্ষণের পালা। কিন্তু কিছুতেই যেন আয়ের পথ খোলেনা। কেন?
ব্লগিং কাকে বলে? কারা ব্লগিং করে?
প্রথমেই বুঝে নিন যে ব্লগ লেখা আর ব্লগ থেকে আয় হওয়া দুটি এক জিনিস নয়। সহজ করে বলি? একটি বিল্ডিং বানানোর অর্থ তাতে বসবাস করার জন্য নয়তো শপিং মল বানানোও হতে পারে। ব্লগ একাউন্ট খুলে ফেললেই আপনি ব্লগার হবেন না। আপনি কি লেখক? কিছু লেখার ক্ষমতা আছে কি আপনার? তবেই ব্লগার হতে পারবেন। সেক্ষেত্রে যে বিল্ডিং বানাবেন সেটাই হবে আপনার বাসস্থান। আপনার মন এবং আত্মা থাকবে সেখানে, সেই ব্লগ হবে সফল। আর ব্লগ থেকে আয়, ওই যে বললাম, শপিং মল বানানোর মতো ব্লগকে ভার্চ্যুয়াল শপ বানিয়ে ফেলতে পারলে তবেই আশানুরূপ আয় হবে। এক্ষেত্রে বিল্ডিং বানাবেন কমার্শিয়াল উদ্দেশ্যে।

সুতরাং, প্রথমেই বেছে নিন কী উদ্দেশ্যে বিল্ডিং বানাবেন, অর্থাৎ এক্ষেত্রে কী উদ্দেশ্যে ব্লগ লিখবেন। আয়ের চিন্তা বা উদ্দেশ্য থাকলে দয়া করে বুঝে নিন যে এই জগতসংসার চলছে বানিজ্যের উপরে ভিত্তি করে, তাই আপনাকে পণ্য বিক্রয় করতে হবে আপনার ব্লগের মাধ্যমে। গুলশান মার্কেটে দোকানঘর ভাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু যেভাবে করতে হবে, সেইভাবেই অনলাইনে ব্লগ একাউন্ট নিয়ে ব্যবসার শুরু করুন। এক্ষেত্রে blogger কম, বেশি করে হতে হবে seller। তফাৎ শুধুই এইটুকু যে আপনার দোকানটি গুলশান মার্কেটে নাহয়ে হবে ইন্টারনেটে - www-তে।

তাহলে আগেই নির্ধারন করে নিন যে আপনি লেখক, নাকি আপনি বিক্রেতা। দিশাহীন হবেননা। তাতে পথ হারিয়ে ফেলবেন।
ব্লগ থেকে আয় | কেস স্টাডি ১
ব্লগার রিয়া। লেখার বিষয়ে সফল রিয়া লোকমুখে শুনে এ্যাডসেন্স আবেদন করলো, ৫ মিনিটের মধ্যে আবেদন মঞ্জুর। পরবর্তী ৬ মাস ধরে আয় হয়েছে মাসে ২ বা ৩ ডলার। হতাশ রিয়া। তখন এতো প্রতিযোগীতা ছিলোনা। প্রো-ব্লগাররা জন্মাননি তখনো। গুগল তখন বিগ ব্রাদার ছিলোনা, মাইক্রোসফট ইন্টারনেট দুনিয়া কাঁপাচ্ছে তখনো, সাথে ইয়াহু। এ্যাডসেন্স তখন সবেমাত্র ৪ মাস হলো চালু হয়েছে, তাই কোনো এক্সপার্টদের লেখালেখি ছিলোনা। এবং, এসইও তখন হাস্যকর অলীক চিন্তা ছিলো। ব্লগের ব্যাপারে niche নামের জিনিসটির আবির্ভাব ঘটেনি তখনো।

ব্লগার রিয়া আয়ের চিন্তা ভুলে তার স্বাভাবিক লেখার ফিরে গেলো। সাধারন ব্লগস্পট ব্লগ। হঠাৎই একদিন হাজারে হাজারে ভিজিটার। অথচ মিশ্র বিষয়ের ব্লগে, নেই নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু। হতাশ রিয়া এ্যাডসেন্স একাউন্টে লগিন করেই চমকে ওঠার মতো অবস্থা। জোরদার আয় হয়েছে। একটি চেক অবশ্যম্ভাবী। হতাশ রিয়ার সামনে একটি আশার আলো। কিন্তু ক্ষীণ আলো। কারন ভালো ট্র্যাকিং ব্যবস্থা নেই, তাই জানার উপায় নেই কোন বিষয়ে এতো ভিজিটার এলো। দিশাহীন রিয়া। সেই ব্লগে তখন ৫৫০'টির মতো পোস্ট।
ব্লগ থেকে আয় | কেস স্টাডি ২
যেমন মানুষের স্বভাব, বসতে পেলে শুতে চায়! কিছু চেক হাতে পেয়েই আনন্দে রিয়ার মাথা খারাপ। আরো ব্লগ বানাতে হবে, আয় আরো বাড়াতে হবে। লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। বাড়তি ব্লগগুলি বিফল হতে লাগলো। অথচ এবারের ব্লগগুলি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপরে ভিত্তি করেই তৈরী। ব্লগার রিয়া অসম্ভব এক বাস্তবের সম্মুখীন। একদিকে মিশ্র বিষয়ের ব্লগ সাফল্যের মুখ সেই যে দেখেছে, জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে সেটির। অন্যদিকে সুনির্দিষ্ট বিষয়ের ব্লগে একেবারেই সাড়া মিলছেনা।

এতোদিন সামান্য হলেও কিছু লেখালেখি হচ্ছে, ফোরামে এবং অন্যান্য ব্লগে বাকিরা শেয়ার করতে শুরু করেছে তাদের অভিজ্ঞতা। শুরু হলো ব্লগার রিয়ার ব্লগ-পড়াশুনার পালা। দিশাহীন মিশ্রবিষয়ের ব্লগ কেন সফল আর সুনির্দিষ্ট বিষয়ের ব্লগ কেন সফল নয়। ধীরে ধীরে জানা গেল কিছু কঠিন সত্য। লিখতে জানলেই হবেনা! আয়ের পথ লেখালেখি নয়, লেখার মধ্যে দিয়ে পণ্য বিক্রয়। নিপূণ লেখনী দিয়ে পাঠককে পৌছে দেওয়া বিক্রেতার কাছে - এটাই মূল বাস্তব হয়ে ধরা দিতে লাগলো।

লেখার জন্য লেখা, আর বিক্রয়ের জন্য লেখা - দুটি আলাদা জিনিস। এই উঠে এলো পরীক্ষানীরিক্ষার মধ্যে দিয়ে। ব্লগার রিয়াকে হতে হলো সেলার রিয়া। অল্প অল্প করে সাফল্য যেন আবার আসার ঈঙ্গিত দিতে লাগলো। পরিষ্কার ভাবে আলাদা হয়ে গেলো দুই ধরনের লেখালেখি। রিয়ার তখন বেসামাল অবস্থা, দুই নৌকায় পা। একদিকে লেখার প্রতি ভালোবাসা, অন্যদিকে নিজেকে বিক্রেতা বানিয়ে ফেলা, নাহলে গুগলের চেক আসবেনা। স্পষ্ট হয়ে গেলো নন-কমার্শিয়াল এবং কমার্শিয়াল ব্লগের ফারাক।
এখানেই ব্লগ থেকে আয়ের শুরু...
চলার পথ যখনই ভালো করে চিনে নেওয়া হলো, তখন থেকেই রিয়া আর হতাশ নয়। নতুন ছন্দে এগিয়ে চলার পালা। "ব্লগ" আলাদা থাকলো, "আয়" আলাদা করা হয়ে গেলো তখন। বানিজ্যিক মনোভাবাপন্ন জগতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই এগোতে হবে। টেক ব্লগ দিয়ে হবেনা, সফটওয়্যার ডাউনলোড আর ট্রিকস শিখিয়ে হবেনা, গান বা মুভি ডাউনলোডের ব্লগ দিয়েও হবেনা। কারন এইসব কোনো পণ্য হিসেবে ব্লগিং করা হয়না।

কাউকে কি দেখেছেন সফটওয়্যার টিপস দিয়ে সেই সফটওয়্যার কিনতে বলছে? কাউকে দেখেছেন গানের প্রিভিউ দিয়ে পুরো এ্যালবাম কিনতে বলছে? এইসব চলেনা। মানুষের মন ফ্রি ডাউনলোডের দিকে। বিজ্ঞাপনে কেউ ক্লিক করবেনা। যারা কেনার, তারা ব্লগ পড়ে তারপরে কেনার জন্য অপেক্ষা করেনা। তাহলে উপায়? হ্যাঁ, উপায় একটাই, অনলাইনে কেনা যায় অথচ ডাউনলোড হয়না এমন পণ্যের মার্কেটিং করুন। অফলাইনে অর্থাৎ বাজারে গিয়ে কিনতে হয় এমন পণ্যের মার্কেটিং করুন। অনলাইনে কিনে শিপিং করে ক্রেতার বাসায় পৌছে দেওয়া হয় এমন পণ্যের মার্কেটিং করুন। আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি - আপনাক হতে হবে পণ্য বিক্রেতার অনলাইন রিপ্রেজেন্টেটিভ। তার সেলস এজেন্ট। এটাই আয়ের রাস্তা।

এই রাস্তা অনেকদূর গিয়েছে, এর অনেক শাখাপ্রশাখা। বাজারে প্রচুর পণ্য, মানুষের কি কি খুব জরুরী সেইসবকে চিহ্নিত করে নিয়ে এগোন। "দামী কীওয়ার্ড" সেইসব পণ্যের পাবেন যেগুলি ইমার্জেন্সি সার্ভিস। কেন জানেন? মানুষ বিপদে পড়লে পালানোর পথ খোঁজে। বেশি লোভ থাকলে সেইগুলিকে চিহ্নিত করে নিয়েই লিখুন। নাহলে স্বাভাবিক অনেক পণ্য আছে, সেইসবকে বেছে নিয়ে লিখুন।
কীভাবে গঠনমূলক লেখা লিখবেন?
প্রথমে স্বাভাবিকভাবে লিখে নিন, সেটিকে পাবলিশ করবেন না। একটু সময় নিন। অন্য জনপ্রিয় ব্লগগুলিতে যান। তাদের সোর্স কোড খুলুন, বিবরণ আর কীওয়ার্ড কি কি দিয়েছে তারা দেখুন। তাদের লেখার মধ্যে ১'ম, ২'য়, ৩'য় প্যারাগ্রাফে কীওয়ার্ডের ব্যবহার কীভাবে করেছে দেখুন। আপনার লেখার সাথে মেলান। আপনি সঠিকভাবে কীওয়ার্ড ব্যবহার করেছেন পোস্টের মধ্যে এবং শিরোনামেও?

দাঁড়ান, আরেকটু বাকি। ব্রাউজার cache & cookies ক্লিয়ার করুন। চলে আসার আগে আবার ওই ব্লগের পেজ রিফ্রেশ করে দেখুন ওইসব ব্লগে যে যে গুগল বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে সেইসবের টাইটেল ও বিবরণ লাইনে কি কি লেখা আছে? সেইসব শব্দগুলিকে কি নিজের লেখার মধ্যে যুক্ত করেছেন? এইগুলো কিন্তু মারাত্মক কীওয়ার্ড যা সরাসরি বিজ্ঞাপনদাতারা ব্যবহার করছেন! সেই বিজ্ঞাপনের মূল্য কী তা হয়তো আমরা জানবোনা, কিন্তু একটি ভালো পেজরেংক যুক্ত জনপ্রিয় ব্লগে দেখতে পাওয়া বিজ্ঞাপনের টাইটেল ও ভাষাগুলিই হচ্ছে শক্তিশালী কীওয়ার্ড। এইগুলিকে ব্যবহার করে নিজের ব্লগে নিয়ে আসতে চেষ্টা করুন। সব সম্পূর্ণ হলে তারপরে লেখা পাবলিশ করুন।

ফলাফল শীঘ্রই পেয়ে যাবেন।

২টি মন্তব্য:

  1. আমি আপনার লিখা পড়লাম খুব ভালো লাগলো,আমি একজন নতুন ব্লগার,আমার ব্লগে ভিজিটার পাছিনা,এবং কিভাবে লিখা শুরু করবো ভাবতে পারছিনা। আমি নিজের মতো কোরে চেষ্টা করেছি,আমার লিঙ্ক হোল www.amibanglay.blogspot.com

    উত্তরমুছুন
  2. ভালই লিখেছেন :) লেখাটা আগে খেয়াল করিনি।

    উত্তরমুছুন